মাসউদুল আলম

ফেসবুক টাইমলাইনে হঠাৎ পরিবর্তন ডট কমের একটা খবরের লিংক ভেসে উঠলো- ‘বাংলাদেশকে আল কায়েদার হুঁশিয়ারি’। চমকে উঠলাম, উঠারই তো কথা। খবরটা পড়ার পর মনে হলো একই খবর কোথাও যেন কিছু দিন আগে পড়েছি। তারপর আজ কিছুক্ষণ গুগল করে বের করলাম সেই নিউজটা, যেটা ২৯ নভেম্বর অনলাইন পত্রিকা নতুনদিনে ছাপা হয়েছিল। দুইটা নিউজ মোটামুটি একই।

তবে নতুনদিনের নিউজটাতে অনুসন্ধিৎসা ছিল, যদিও শিরোনামটা যুৎসই হয়নি। পরিবর্তন সেদিক থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। সাংবাদিকতা নিয়ে আমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। তবে প্রায় সাড়ে তিন বছর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা ও কাণ্ডজ্ঞান থেকে আমি মনে করি, কোনো সোর্স থেকে সংবাদ পাওয়া মাত্রই যাচাই-বাছাই না করে, সেটা পাবলিশ করে দেওয়া ঠিক না। বিশেষ করে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে তো নয়ই।

যাই হোক, চলুন সংবাদটা নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ করি।

২৫ ডিসেম্বর তারিখে পরিবর্তন ডট কম জানাচ্ছে, 

“চলতি মাসের ৮ ডিসেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত এক অডিওবার্তায় এ হুঁশিয়ারি দেন জাওয়াহিরি।…. ইউটিউবে ‘ইসলামের আলো’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে জাওয়াহিরির এই অডিওবার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছে। … আরবি ভাষায় দেয়া জাওয়াহিরির বক্তব্যটি ইসলামের আলোর পক্ষ থেকে বাংলা ভাষায় ডাবিং করে অডিও রেকর্ড আকারে প্রচার করা হয়।”

অন্যদিকে, নতুনদিন ডট কম ২৯ নভেম্বর তারিখে আমাদের জানাচ্ছে, 

“আল কায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরির নামে আরবির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় প্রকাশ করা একটি ভিডিও বার্তায় এমন বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত তিনটায় ফেসবুকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে এই ভিডিও বার্তাটি রিলিজ করা হয়।”

‘ইসলামের আলো’র ইউটিউব একাউন্ট থেকে ৩ মিনিটের বক্তব্যটি দেখেছি। তবে নতুনদিন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ফেসবুক পেজের যে  লিংক দিয়েছিল সেই লিংকে গিয়ে ভিডিওটি পাইনি। অবশ্য নতুন দিন তাদের নিউজে ভিডিওর যে স্ক্রিনশট দিয়েছে, তার সাথে ‘ইসলামের আলো’র সম্প্রচারিত ভিডিওর চিত্র হুবুহু মিলে যায়। এ থেকে ধরে নিতে পারি যে, বাংলায় ডাবিং করা পৃথক সোর্সের দুইটা  ভিডিও আসলে একই। অর্থাৎ ‘ইসলামের আলো’ এবং ‘আনসারুল্লাহ বাংলা  টিম’ আসলে একই। যদি তাই হয়, তাহলে পরবর্তন ডট কমের দাবি অনুযায়ী ‘চলতি মাসের ৮ তারিখে’ এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়নি, হয়েছে আরো আগে, কমপক্ষে ২৯ নভেম্বর।

এবার দেখা যাক, সত্যি সত্যিই কি আল কায়েদা প্রধান ২৯ নভেম্বর এ ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল? নতুনদিন ডট কম জানাচ্ছে, 

আইমান আল জাওয়াহিরির বক্তব্যটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ধারণ করা। নতুনদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আল কায়দা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি আনুষ্ঠানিকভাবে গত সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ সর্বশেষ বক্তব্য রেখেছেন। ওই বক্তব্যের ভাষ্য থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর করা প্রতিবেদনের কোথাও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসেনি। কিন্তু শুক্রবার ফেসবুকে প্রচার করা ভিডিওটিতে আইমান আল জাওয়াহিরিকে ‘বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদে বলেছে, “In an audio speech released online two days after the 12th anniversary of the 9/11 strikes.” আল জাজিরা আরো বলছে, এই অডিও বক্তব্যটির সত্যাসত্য সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি (The message’s authenticity could not be independently confirmed.)

আল জাজিরা ছাড়াও বিবিসি, গার্ডিয়ান, আল-আরাবিয়া (মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এ সংক্রান্ত খবরগুলো পড়লাম। কিন্তু কোথাও বাংলাদেশ নিয়ে একটা শব্দও পেলাম না। তাহলে এ অডিও বার্তাটি কোত্থেকে এলো? নতুনদিন ওই নিউজে বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, 

নতুনদিনের পক্ষ থেকে দু’জন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা আল কায়েদা প্রধানের নামে প্রচারিত এই ভিডিওর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তাদের সংশয়ের কথা জানান। তারা বলেন, খুব সম্ভবত ধর্মভীরু মানুষের সমর্থন পেতে দেশ বিরোধী কোন চক্র আল-কায়দা প্রধানের নামে এই ভিডিওটি তৈরি করে ছেড়েছে।

আমি এই বক্তব্যটিকে সঠিক মনে করি।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *